বাংলাদেশ ব্যাংক এবার নতুন নিয়ম চালু করেছে, যার ফলে যে সব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি, তারা ২০২৫ সালে লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ড) দিতে পারবে না। এতে প্রায় ২৩টি ব্যাংক প্রভাবিত হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা জারি করেছে। নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংকগুলোকে এখন শুধুমাত্র বছরে অর্জিত মুনাফা থেকেই নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। পূর্বের মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দেওয়া যাবে না। এছাড়া, যদি কোনও ব্যাংকের জমার হার বা লিকুইডিটি ঘাটতি থাকে, কিংবা যদি তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনও ঋণ সুবিধা নেয়, তবে তারা লভ্যাংশ দিতে পারবে না। লভ্যাংশের পরিমাণও নির্দিষ্ট করা হয়েছে— তা মূলধনের ৩০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। তবে, যেসব ব্যাংক তাদের মূলধন যথেষ্ট পরিমাণে সংরক্ষণ করতে পারবে, তারা শর্ত অনুযায়ী লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে। এই কঠোর নিয়মের ফলে ব্যাংকগুলো তাদের আর্থিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করতে উৎসাহিত হবে এবং শেয়ারহোল্ডারদের লাভের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে আমানতের সুরক্ষায়। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ শতাংশের তারা দিতে পারবে না লভ্যাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২৪ এর ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিংখাতে খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশেরও বেশি। নতুন নীতিমালা ২০২৫ সালের লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশের নীতিমালা করে— তা পরিপালনের জন্য সব তফসীলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠিয়েছে। নতুন নীতিমালায় কেবলমাত্র পঞ্জিকাবষের্র মুনাফা থেকে নগদ লভ্যাংশ প্রদান করা যাবে; পূর্বের পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে কোনও নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করা যাবে না। কোনও ব্যাংকের নগদ জমার হার (সিআরআর) ও সংবিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত (স্ট্যাচুটরি লিকুইডিটি রেশিও—এসএলআর) ঘাটতির কারণে দণ্ড সুদ ও জরিমানা অনাদায়ী থাকলে এমন ব্যাংকগুলোও লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এছাড়া ব্যাংকের ঋণ, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে কোনও প্রকার প্রভিশন ঘাটতি থাকা যাবে না। একইসঙ্গে কোনও ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণ ও অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনও প্রকার ডেফারেল সুবিধা গ্রহণ করলে তারাও লভ্যাংশ দিতে পারবে না। লভ্যাংশের শর্তগুলো পুরোপুরি অনুসরণ করতে পারলেও— একটি ব্যাংক শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ কোনোক্রমেই পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের অধিক হবে না। তবে যেসব ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পর, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে পারবে— তারা সামর্থ্য অনুসারে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে। সেক্ষেত্রে, তাদের লভ্যাংশ প্রদানের অনুপাত সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশের বেশি হবে না, এবং লভ্যাংশ বিতরণ পরবর্তী মূলধন পর্যাপ্ততার হার কোনভাবেই ১৩ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নামতে পারবে না। কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি, কিন্তু ১৫ শতাংশের কম মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সেসব ব্যাংক তাদের সামর্থ্য অনুসারে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে। সেক্ষেত্রে, লভ্যাংশ প্রদানের অনুপাত সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ হতে পারবে এবং লভ্যাংশ বিতরণ পরবর্তী মূলধন পর্যাপ্ততার হার কোনোভাবেই ১২ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নামতে পারবে না। ব্যাংক ব্যবস্থায় বিপুল খেলাপি ঋণ আর মূলধন ঘাটতি নিয়ে অনেক বছর ধরেই আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এতে হুমকির মুখে ব্যাংকখাতের টেকসইতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এসব নির্দেশনা সেই প্রেক্ষাপটেই এসেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, এর ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি রয়েছে, এমন ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণা বন্ধ করা যাবে। নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা আশা করছেন, এ ধরনের কঠোর নীতিমালার ফলে ব্যাংকগুলো তাদের ব্যালেন্স শিট শক্তিশালী করতে উদ্যমী হবে এবং শেয়ারহোল্ডারদের রিটার্নের চেয়ে বেশি নজর দেবে আমানতের সুরক্ষায়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

১০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকা ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে না
- আপলোড সময় : ১৫-০৩-২০২৫ ০৭:০৬:৩৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-০৩-২০২৫ ০৭:০৬:৩৫ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ